ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় বিচার পেলেন ভুক্তভোগী – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নারী সমাজের ধন্যবাদ
দৈনিক সমসাময়িক প্রতিবেদন
১৯ নভেম্বর, ২০২০
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি মজনুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের নারী সমাজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া অব্যাহত আছে। তবে অসন্তোষ জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, ন্যায়বিচারের দাবিতে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। ৫ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুর্মিটোলা বাসস্টেশনের পাশে ধর্ষণের শিকার হন ওই ছাত্রী।
দুপুরে আদালতে আনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামী মজনুকে। আদালতের কাঠগড়ায় তোলার সময় মজনু অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। পুলিশ ও আইনজীবীসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের গালিগালাজ, অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও চেঁচামেচি করেন তিনি। আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। মজনুর এমন অস্বাভাবিক আচরণের কারণে রায় ঘোষণার আগে আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের এজলাসকক্ষের বাইরে যেতে বলা হয়। রায় ঘোষণার আগে আজ বৃহস্পতিবার আদালতকক্ষে এমন অস্বাভাবিক আচরণ করেন আসামি মজনু।
বেলা আড়াইটার দিকে রায় ঘোষণার আগে মজনুকে আদালতে তোলে পুলিশ। আসামির কাঠগড়ায় তোলার পর মজনু অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে মজনু বলতে থাকেন, তাকে যেন আজই ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশের এক সদস্যের শার্টের কলার ধরে টান দেন। এ সময় চিৎকার করে মজনু বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি বাড়ি যাব। আমাকে ছেড়ে না দিলে লাফ দিয়ে মরে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই, ধর্ষণ করছে চারজন মিলে। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। আমি গরিব দেখে আমাকে ধরেছে। আমার নাম মজনু পাগল, আমার গায়ে শক্তি নাই। আমাকে ছেড়ে দেন।’ এক পর্যায়ে মজনু গণমাধ্যম কর্মীদের গালিগালাজ করে ধাওয়া দেন। পরে পুলিশ এসে পরিবেশ শান্ত করে।
৫ নভেম্বর এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। গত ২৬ আগস্ট মামলার একমাত্র আসামি মজনুর বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। গত ১৬ মার্চ এই মামলায় মজনুর বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মামলার অভিযোগপত্রে ২৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনসহ মামলার আলামত হিসেবে ২০ ধরনের জিনিস জব্দ দেখানো হয়। আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে পুলিশ বলেছে, গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গলফ ক্লাবসংলগ্ন স্থানে পৌঁছান। এ সময় আসামি মজনু তাঁকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। পরে র্যাব অভিযান চালিয়ে মজনুকে গ্রেপ্তার করে।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ বলেন, ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। বাদীপক্ষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী আবদুর রশীদ বলেন, রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। মজনুর আইনজীবী (সরকার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত) রবিউল ইসলাম বলেন, রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, সেই ছাত্রীর ফরেনসিক রিপোর্টে একাধিক লোকের ডিএনএ পাওয়া গেছে, যেখানে মজনুর ডিএনএও পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন ওই ঢাবি ছাত্রী। এরপর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান হারান ওই ছাত্রী। ডাক্তারি পরীক্ষায় নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রী। পরে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান তিনি। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন সহপাঠীরা। পরদিন সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি উত্তর)। ৮ জানুয়ারি মজনুকে গ্রেফতার করে র্যাব। ৯ জানুয়ারি সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে মজনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশকে অনুমতি দেন আদালত। ১৬ জানুয়ারি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত। গত ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু বক্কর। ২৬ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার ভার্চুয়াল আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।